তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাষ্টীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষাবিদ-গবেষক-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার

রাষ্টীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষাবিদ-গবেষক-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার
[ভালুকা ডট কম : ১৭ আগস্ট]
১৮ আগস্ট শিক্ষাবিদ-গবেষক-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক লেখক অধ্যাপক যতীন সরকারের ৮০তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে নেত্রকোনায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

তিনি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে ১৮ আগস্ট ১৯৩৬সালে জন্ম গ্রহণ করেন। সর্বোচ্চ রাষ্টীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।তিনি ১৯৪৩সাল থেকে ৪৬সাল পর্যন্ত রামপুর ফ্রি বোর্ড স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ৫ম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার পারুলতলার হাতিল গ্রামে মামার বাড়িতে চলে আসেন। প্রচ- দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করেই এগিয়ে চলেন অধ্যাপক যতীন সরকার। ১৯৪৮সালের ফেব্রুয়ারিতে নেত্রকোনা সদরের সবচেয়ে ভালো হাইস্কুল চন্দ্রনাথ হাইস্কুরে ভর্তি হন। স্কুল থেকে দেড় মাইল দূরে পুকুরিয়া গ্রামে বাপের জ্যাঠাতো বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ভালো স্কুলে লেখাপড়ার সুভাগ্য বেশিদিন হয়নি। রাজনৈতিক অবস্থায় ভীতস্পৃহ হয়ে পিসিমায়ের ছেলেরা কুচবিহারে চলে গেলে তাঁকে আবার পাশের গ্রামের বেকৈরহাটি স্কুলে ফিরতে হয়। ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত এ স্কুলে পড়ালেখা করেন যতীন সরকার। ১৯৫০সালে দাঙ্গায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৮ম শ্রেণির পড়া শেষ করেই ১৯৫১ সালে রামপুর থেকে আড়্ ামিাইল দূরে আশুজিয়া হাই স্কুলে ৯ম ¤্রিেণতে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে আশুজিয়া স্কুল থেকে মেট্টিক পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও দুরারোগ্য পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। মেট্টিক পরীক্ষা দেন ১৯৫৪সালে।

যতীন সরকার বাবা জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র সরকারের হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি ছাড়া আর কোনা আয়োনের উৎস ছিল না। তাঁদের গ্রাম চন্দ্রপাড়ার পার্শ্ববতী দলপা ও নন্দীগ্রাম ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। পাকিস্তান হওয়ার পরপর ওই এলাকার লোকজন ব্যাপক হারে বারতে অভিবাসী হয়। এতে করে তাঁর পিতার ডাক্তারি পেশার পসার কমে আসে। যতীন সরকারের পরিবার দারুন আর্থিক দৈন্যের মধ্যে পড়ে যায়। ফলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই রামপুর বাজারে তাঁকে দোকান খুলে বসতে। হয়। বাজারে চাটাই বিছিয়ে তিনি ডাল এবং পান, বিড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি বিক্রি করে সংসারে প্রতিদিনের খরচের যোগান দিতে থাকেন।

১৯৫৪সালে মেট্টিক পরীক্ষা দিলেও আইএ ভর্তির টাকা যোগাড় করার জন্য তাঁকে এক বছর অপেক্বষা করতে হয়। টিউশনি করে টাকা জমিয়ে ১৯৫৫ সালে আইএতে ভর্তি হন নেত্রকোনা কলেজে। শহরে লজিং থেকে চালিয়ে যান লেখাপড়া। এই কলেজের ছাত্রসংসদে তিনি সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬সালে দুর্ভিক্ষের সময় যে পরিবারে লজিং থাকতেন সে পরিবারের অভাবের সংসারে অর্থের যোগান দেওয়ার পাশাপামি অনেকদিন সবার সাথে তাঁকেও থাকতে হয়েছে অনাহারে। নেত্রকোনা কলেজ থেকে আইএ পাশের পর ১৯৫৭সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে বিএতে ভর্তি হন। ময়মনসিংহ শহরে লজিং থেকেই শুরু হয় তাঁর বিএ পড়া। ১৯৫৯ সালের বিএ পরীক্ষা দিয়েই শিক্ষকতা শুরু করেন আশুজিয়া হাইস্কুলে। ১৯৬৩সালের অক্টোবরে গৌরীপুর আরকে হাইস্কুলে বাংলার শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন।

প্রায় ৫০বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম পুস্তক সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা। সেটি ছিল ১৯৮৫সাল। বাংলা একাডেমি ১৯৮৬সালে প্রকাশ করেন ‘বাংলাদেশের কবিগান’ গ্রন্থটি। হাক্কানী পাবলির্শাস বের করে ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, ইউপিএল থেকে বের হয় ‘বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’। শিশুদের জন্য সুপাঠ্য ব্যাকরণগ্রন্থ ১৯৯৪সালে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করে ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’।

তাঁর লেখা ৪টি জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। সেগুলো হল ‘কেদারনাথ মজুমদার’, ‘চন্দ্রকুমার দে’, ‘হরিচরণ আচার্য’, ‘সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী’।মানবমন মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞানচেতনা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার, আমাদের চিন্তাচর্চার দিক-দিগন্ত, রাজনীতি ও দুর্নীতি বিষয়ক কথাবার্তা, ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূত ভবিষ্যৎ, ভাষা সংস্কৃতি উৎস নিয়ে ভাবনা চিন্তা, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, সত্য যে কঠিন, আমার রবীন্দ্র অবলোকন, রচনাসমগ্র-১, ব্যাকরণের ভয় অকারণ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’, প্রসঙ্গ মৌলবাদ, জালালগীতিকা সমগ্র। তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সভাপতি এবং ত্রৈমাসিক সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পত্রিকার সম্পাদক।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনবদ্য আত্মজীবনী পাকিস্তানের জম্মমৃত্যু-দর্শন প্রথম আলো বর্ষসেরা-১৪১১ বই হিসাবে পুরস্কৃত হয়। প্রথম লেখার জন্য তরুণ লেখক হিসাবে ১৯৬৭সালে বাংলা একাডেমির ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক পান। ১৯৯৭সালে নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজ তাঁকে খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনির উদ্দিন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৮সালে শ্রুতি স্বর্ণপদক, ২০০১সারে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৭সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০০৮সালে ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও আমরা সূর্যমুখীর সম্মাননা পান। ২০০৯সালে পান ছড়াকার আলতাফ আলী হাসু পুরস্কার। এছাড়াও নেত্রকোনা উদীচী, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ, কেন্দুয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ব্যাক্তিত্ব বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই