তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকার বজলুর নিজ গৃহে শিকলবন্দী ১২ বছর

ভালুকার বজলুর নিজ গৃহে শিকলবন্দী ১২ বছর
[ভালুকা ডট কম : ০৫ সেপ্টেম্বর]
ভালুকা উপজেলার ধীতপুর ইউনিয়নের টুংরাপাড়া গ্রামে প্রায় ১২ বছর ধরে নিভৃত পল্লীর নির্জন একটি কক্ষে শিকল বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সাফল্যের সাথে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় হতে বি এস সি, এজি, অনার্স পাশ করা একজন মেধাবী কৃষিবিদ মৃত আঃ মালেকের পুত্র বজলুর রহমান (৪৮)।

০৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার টুংরাপাড়া গ্রামে মৃত মালেকের সবুজ বৃক্ষের আচ্ছাদনে চারিদিক ঘেরা বাড়ীতে গিয়ে দেখাযায় একটি ঘরের দরজা খোলা ভিতরে আসভাবপত্রহীন মেঝে পাতলা কাপড় গায়ে জড়িয়ে শিকলবন্দী অবস্থায় পড়নে কাপড়বিহীন জবোথবো হয়ে বসে রয়েছেন বজলুর রহমান। আশপাশে বসা কিংবা শয্যার কোন ব্যবস্থা নেই। তৃঞ্চা মেটানোর পানির পাত্র কিংবা খাবারের বাসন কোন কিছুই কাছে নেই। মেঝের মাঝখানে পুঁতা একটি বাঁকা লোহার সাথে কয়েকটি তালা অনুমান দেড়ফুট লম্বা শিকল পায়ের সাথে লাগানো বহুদিন না খোলার কারনে মরিচা ধরে গেছে। বুঝাযায় এখানেই মলমূত্র ত্যাগ করায় প্রতিদিন ধূয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। শয্যা বিহীন স্যাঁত স্যাতে মেঝে শীত গরমে পরে থেকে আর অপুষ্টিতে ভোগে সুঠাম দেহের অধিকারী মানুষটির শরীরে ও চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পরেছে। তথাপিও তার চাহনী ও মুখভঙ্গিতে শিক্ষার প্রতিফলন প্রকাশ পাচ্ছিল। এভাবে বছরের পর বছর কেটে গেছে তার জীবন থেকে । কোন কিছু জানতে চাইলে প্রলাপ বকেন, স্মৃতি নষ্ট হওয়ায় সন্তানদের কথাও কিছু বলতে পারেননা।

বজলুর রহমানের বৃদ্ধা মা জানান প্রায় ২০/২২ বছর পূর্বে তার ছেলে মানষিক ভরসাম্যহীন হয়ে পরে। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করা হয়েছে। কিছুটা সুস্থ্য হওয়ার পর বিয়ে করানো হয়। বিয়ের পর শিফাত ও সুপ্তি নামে দুটি কন্যা সন্তান হয়। পুনরায় খারাপের দিকে গেলে ৫/৬ বৎসরের মাথায় বজলু ও দুই মেয়েকে ফেলে তার স্ত্রী চলে যায়। সেসময় মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়ার কারনে নানা রকম তান্ডব করায় নিরাপত্তার জন্য ভাইয়েরা তাকে শিকলে বেঁধে ঘরবন্দী করেন। বিছানাপত্র নেই নিদ্রা যায় কিভাবে জানতে চাইলে তিনি জানান হাটুঘেরে মেঝে উভো হয়ে কখনোবা বসা অবস্থায়। এমন কথা শোনে গা শিউরে উঠে। শিকলে বাঁধা অবস্থায় চাচাদের তত্বাবধানে দুই মেয়ে লেখাপড়া করে বড় হয়। সিফাতের বিয়ে দেয়া হয়েছে ছোট বোন সুপ্তি কলেজে এইচ এসসি দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছে।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কথা হয় বজলুর রহমানের নিজ গ্রামের সহপাঠি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক মানিকের সাথে। তিনি জানান গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তারা একই ক্লাশে লেখাপড়া করেছেন। উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে আলাদা হলেও ৮৮/৮৯ ব্যাচে তারা দুজনেই এক সাথে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ে বি এস সি, এজি অনার্স ভর্তি হন। বজলু এ সেকশনে সোহরাওয়ার্দী হলে আর তিনি বি সেকশনে আশরাফুল হক হলে অধ্যয়ন রত ছিলেন। তিনি জানান বজলু লেখাপড়ায় বরাবরই এগিয়ে থাকতো। দেখা হলে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতেন। সেসন জটের কারনে ১৯৯৬ সনে তারা অনার্স ফাইনাল সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে মাষ্টার্স সম্পন্ন করে তিনি কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন আর বজলু চলে আসে গ্রামে। এর কিছুদিন না যেতেই বজলুর রহমান মানষিক রোগাক্রান্ত হয়ে পরে। খবরটি শোনার পর তিনি খুবই ব্যাথিত হন। গ্রামে আসলে তার সাথে দেখা করতেন। বর্তমান করুন অবস্থাটি সম্পর্কে তিনি কোন খবর জানেন না। তবে তিনি তার সুস্থ্যতা কামনা করেছেন।

আশপাশ ও এলাকার মানুষ বজলুর রহমানের এমন অবস্থা দেখে কেবলই আফসোস করেন । পরিবারের লোকজনের বিশেষ করে মায়ের কথা তারা মনষিক রোগের যথেষ্ট চিকিৎসা করে অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করেছেন কোন ফয়দা হয়নি। আবার অনেকে মনে করেন একজন সুস্থ্য মানুষকে এ অবস্থায় বছরের পর বছর শিকলবন্দী করে রাখলে তার কি অবস্থা হবে? মনষিক রোগীকে সুস্থ্য করার জন্য যে পরিবেশ, চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন বজলুর রহমান কি তা পেয়েছেন।

সরকারের কাছে এলাকাবাসীর দাবী বজলুর রহমানকে এ অবস্থা হতে উদ্ধার করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে একজন কৃষিবিদকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করবেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই