তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

রাণীনগরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্য বিয়ে

রাণীনগরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্য বিয়ে,দৃষ্টান্তর মূলক সর্বোচ্চ শাস্তিই কমাতে পারে বাল্য বিয়ে
[ভালুকা ডট কম : ২৯ সেপ্টেম্বর]
নওগাঁর রাণীনগরে কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না বাল্য বিয়ে। দিন যতই যাচ্ছে ততই বাল্য বিয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই এর কারণ হিসেবে প্রশাসনের নজরদারীকে দায়ী করছেন। আবার ভ্রাম্যমাণ আদালতে বাল্য বিয়ের কঠোর শাস্তি না দেওয়ার বিষয়টিকে দোষারোপ করছেন সচেতন মহল। এছাড়াও বেশি বেশি করে সচেতনতামূলক কর্মকান্ডই পারে বাল্য বিয়ে রোধ করতে এমনটাই ধারনা সাধারন মানুষদের।

সূত্রে জানা গেছে উপজেলার বাল্য বিয়ে খ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত কালিগ্রাম ইউনিয়নের মধূপুর, ছাতারদীঘি, ছাতাপুকুর, অলংকারদীঘি, ভেটিগ্রাম ও পারইল ইউনিয়নের পারইল, বিশিয়াসহ এর আশেপাশের গ্রামগুলো। প্রতি সপ্তাহে এই এলাকার গ্রামগুলোতে বাল্য বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছেই। সম্প্রতি ছাতারদীঘি, ছাতারপুকুর ও মধুপুর গ্রামে ৪টি বাল্য বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যে সব বাল্য বিয়ে দেওয়ার ঘটনা প্রশাসন জানতে পারে সেগুলোতে গিয়ে বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করে এনে অর্থ জরিমানা না হয় জেল প্রদান করে। কিন্তু এই রকমের শাস্তি অভিযুক্তদের কাছে কিছুই নয়।

সম্প্রতি একই দিনে ছাতারপুকুর ও ছাতারদিঘী গ্রামে বাল্য বিয়ে হচ্ছে খরব দিলে নির্বাহী কর্মকর্তা একটি বিয়ে থেকে কাজী ও মেয়ের দুই মামাকে এনে অর্থদন্ড করে। পর দিনই ওই মেয়েকে পাশ্ববর্তি আদমদীঘি উপজেলাতে নিয়ে গিয়ে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয়। উপজেলার ছাতারপুকুর গ্রামের দুলালের জনৈক মেয়েটি ভেটি মাদ্রাসার ৯শ্রেণির শিক্ষার্থী। অপর বিয়েতে নির্বাহী কর্মকর্তা না গিয়ে দুইজন পুলিশ সদস্যকে পাঠালে তারা সেখান থেকে কিছু অর্থ নিয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই চলে আসেন। এতে করে একই জায়গায় প্রশাসনের দ্বিমুখি ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই এলাকাগুলোতে কোন ভাবেই কমছে না বাল্য বিয়ে দেওয়ার ঘটনা।

উপজেলার সচেতন মহল মনে করছেন শুধু বাল্য বিয়ের সময়ই নয় বিয়ের পরও যদি বর ও কনের পক্ষকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে বাল্য বিয়ে অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়াও উপজেলার যে সব চিহ্নিত কাজীরা অর্থের লোভে নকল কাগজপত্র তৈরি করে বাল্য বিয়ে সম্পাদন করে আসছে তাদেরকেও সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকেও বাল্য বিয়ের ক্ষেত্রে সৎ মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে তবেই এই সমস্যা থেকে উত্তোরন পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনকে বাল্য বিয়ে রোধে সচেতন মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করা দরকার। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এই বিষয়ে মুখ্য ভ’মিকা পালন করতে পারে।

রাণীনগর সরকারি শের-এ বাংলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোফাখ্খার হোসেন খাঁন পথিক বলেন যতই দিন যাচ্ছে উপজেলাতে বাল্য বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসেনর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের উদাসীনতায় এই ঘটনাগুলো বেশি বৃদ্ধি হচ্ছে। কারণ বিয়ে রেজিস্ট্রি করার সময় বয়স প্রমাণের জন্য অবশ্যই ইউনিয়ন পরিষদের সদনপত্র প্রয়োজন হয়। তারা কিভাবে একটি মেয়ের বিয়ের বয়স না হলেও জন্মসনদ প্রদান করে। এই বাল্য বিয়ে রোধ করার ক্ষেত্রে তাদের ভ’মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। শুধু অর্থদন্ডই নয় বেশি বেশি করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করতে হবে যেন আশেপাশের মানুষরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সর্বোপরি প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার মানুষদের বাল্য বিয়ে সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে বাল্য বিয়ে রোধে পজেটিভ ভ’মিকা পালন করতে হবে।

মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর বলেন চলতি বছরে তার বিদ্যালয় থেকে ১০ম শ্রেণির ১০জন, ৯ম শ্রেণির ৮জন, ৮ম শ্রেণির ৩জন ও ৭ম শ্রণির ৩জন মেয়ের বাল্য বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই এলাকায় কোন ভাবেই বাল্য বিয়েকে রোধ করা যাচ্ছে না। যদি প্রশাসন বাল্য বিয়ের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী জেল দিয়ে দৃষ্টান্তর স্থাপন করেন তাহলে তা দেখে হয়তোবা অনেকেই সর্তক হবেন। এছাড়াও বাল্য বিয়ে প্রবণ এলাকাগুলোতে বেশি বেশি করে বাল্য বিয়ের ক্ষতিকর দিক ও শাস্তি সম্পর্কে সচেতনতা মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। এই ভাইরাস থেকে উত্তোরনের একমাত্র উপায় মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন বাল্য বিয়ে রোধে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। যখই বাল্য বিয়ের খবর পাই তখনই ছুটে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসছি। প্রশাসনের একার পক্ষে বাল্য বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। সমাজের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে হবে এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তবে প্রশাসন বাল্য বিয়ে রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

নারী ও শিশু বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই