বিস্তারিত বিষয়
দেশের ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য,প্রশাসন নীরব
দেশের ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য,প্রশাসন নীরব
[ভালুকা ডট কম : ২৫ নভেম্বর]
দেশের ওষুধের বাজারে চলছে নৈরাজ্য। ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো। খুচরা ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্য মানছে না। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর এক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আর নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে নাকাল হচ্ছেন রোগী আর তাদের পরিবার।
রাজধানীর মিটফোর্ডের পাইকারি ওষুধের বাজার ও খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা জানান, সম্প্রতি সবচেয়ে দাম বেড়েছে ইনসুলিনের। এছাড়া হৃদরোগ, ক্যান্সার ও হেপাটাইটিসের ওষুধের দাম বেড়েছে। এক্ষেত্রে এক হাজার টাকার ইনসুলিন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। ডায়াবেটিস রোগীদের বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেটের দাম বেড়েছে ৯ থেকে ২০ টাকা। হৃদরোগের যেসব ওষুধের এক প্যাকেটের দাম ছিল ৬০ টাকা, তার বর্তমান মূল্য ১৫০ টাকা। হেপাটাইটিস (বি+সি) কম্বিনেশন এক হাজার টাকার ওষুধ বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা। কাশির ওষুধেরও দাম বেড়েছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে প্রয়োজনীয় ডসেটিক্সেল, প্যাক্লিটেক্সেল, কার্বোপ্লাটিন, সিসপ্লাটিন, জেমসিটাবিন ইত্যাদি ওষুধের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একইভাবে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কোম্পানিগুলোও তাদের ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের দাম বাড়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি কাঁচামালের (এপিআই) বাজারও স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও দেশে বিভিন্ন কোম্পানি একই ওষুধ উৎপাদন করে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করছে। যেমন, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের জি ক্যাটামিন ৫০ এমজির প্রতিটি ভায়ালের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৮০ টাকা, পপুলার ফার্মার ক্যাটালার ১১৫ টাকা, ইনসেপ্টার ক্যাটারিড ১১৫ টাকা এবং রেনেটার কেইন ইনজেকশন প্রতি ভায়াল ১০০ টাকা। তবে সরবরাহ সংকটে বর্তমানে এসব ইনজেকশন ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ওষুধ প্রশাসনের হিসেবে আড়াই হাজারের বেশি ওষুধ দেশে উৎপাদন বা পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করে থাকে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে বাজারে চাহিদা কম এরকম ১১৭টির ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাকিগুলোর মূল্য নির্ধারণে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
১৯৮২ সালে প্রবর্তিত ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশে যে কোনো ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল সরকারের হাতে। কিন্তু ১৯৯৪ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, অত্যাবশ্যকীয় তালিকাবহির্ভূত ওষুধের দাম নিজ নিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। সেই নির্দেশনার বলে ইচ্ছামতো দাম নির্ধান করার সূযোগ পায় কোম্পানিগুলো। ২০১৬’র নীতিমালায় কিছুটা পরিবর্তন করা হলেও বর্তমানে কোম্পানিগুলো যে দাম চাইছে, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সেই দামেই বিক্রির অনুমতি দিচ্ছে। ফলে ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডাক্তার ফায়েজুল হাকিম বলেছেন, বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে রোগীর পকেট থেকে ব্যয় হয় সবচেয়ে বেশী। এর মধ্যে যার দুই-তৃতীয়াংশই ব্যয় হয় ওষুধের পেছনে। এখানে সরকার পক্ষের লোকজন ওষুধ ব্যবসায় যুক্ত বলে তারা অন্যসব ভোগ্য পণ্যের মতো জীবন রক্ষাকারী ওষুধকেও মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্র বানিয়ে জনগণের পকেট কাটছে। তিনি মনে করেন, এভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে।
বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব গণমাধ্যমকে বলেছেন, ৯৫ ভাগ মানুষের সুস্থতার জন্য যেসব ওষুধ গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। আমাদের ক্ষমতা নেই এ কথা বলে ঔষধ প্রশাসন বসে থাকতে পারে না। ওষুধের দাম বাড়লে অবশ্যই তার যৌক্তিকতা থাকতে হবে। তাছাড়া ওষুধনীতিতে তাদের যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া আছে, যেটার ব্যবহার করতে হবে। কোম্পানির স্বার্থ দেখা তাদের কাজ নয়।
এ প্রসঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি। তাছাড়া সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দশনা অনুযায়ী ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বা নির্ধারিত মূল্যের বেশী দামে বিক্রির দায়ে অনেক বিক্রেতাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
ওষুধ শিল্প সমিতি সূত্র জানায়, সাধারণত ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআইর দাম বাড়ার কারণে বাড়ে ওষুধের দাম। পাশাপাশি বিপণন খরচের ভূমিকা থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ কাঁচামাল আসে ভারত ও চীন থেকে। এগুলোর দাম সময় সময় ওঠানামা করে। এক্ষেত্রে দাম বাড়লে কোম্পানিগুলো ঔষধ প্রশাসনে দাম বাড়ানোর আবেদন করে। কিন্তু দাম কমলে তারা আর ওষুধের দাম কমানোর কথা চিন্তা করে না।
এ প্রসঙ্গে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান বলেছেন, আমার জানা মতে, কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়ায়নি। তবে দোকানিরা যদি দাম বাড়িয়ে থাকে তা দেখার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের। আমাদের কিছু করার নেই।#
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
-
রাণীনগরে ডিজিটাল পোস্ট অফিস ফলের দোকানে [ প্রকাশকাল : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০০ অপরাহ্ন]
-
দেশের ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য,প্রশাসন নীরব [ প্রকাশকাল : ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৯:০০ পূর্বাহ্ন]
-
নওগাঁর গ্রামীণ রাস্তাগুলো মরণ ফাঁদ,চরম দুর্ভোগে মানুষ [ প্রকাশকাল : ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১১:১৪ পূর্বাহ্ন]
-
নান্দাইল হাসপাতালে ডাক্তার-কর্মচারী সংকটে [ প্রকাশকাল : ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:০৬ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় ব্রিজ আছে নেই রাস্তা,দূর্ভোগে মানুষ [ প্রকাশকাল : ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪০ অপরাহ্ন]
-
গফরগাঁওয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহীদ আব্দুল বেপারী তোরণ [ প্রকাশকাল : ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৩৮ অপরাহ্ন]
-
রাণীনগরে খাস জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ [ প্রকাশকাল : ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:১৬ অপরাহ্ন]
-
রাণীনগরের গ্রামীণ রাস্তা মরণ ফাঁদ,প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা [ প্রকাশকাল : ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:০৭ অপরাহ্ন]
-
সান্তাহার জংশন রেলওয়ে স্টেশনে প্রয়োজন আধুনিক অবকাঠামো [ প্রকাশকাল : ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:০০ অপরাহ্ন]
-
ক্ষতিগ্রস্থ বেরিবাধ ভাঙ্গনের আশংকায় রাণীনগর-আত্রাইবাসী [ প্রকাশকাল : ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৮:০০ অপরাহ্ন]
-
মহাদেবপুরে আত্রাই নদীর মহিশবাথান ঘাটে সিসি ব্লকে ধ্বস [ প্রকাশকাল : ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০৬:০৫ অপরাহ্ন]
-
রাণীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে ৩জন ডাক্তার দিয়ে [ প্রকাশকাল : ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৬:০০ অপরাহ্ন]
-
নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর সমস্যায় জর্জরিত শার্শা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স [ প্রকাশকাল : ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৭:৫৩ অপরাহ্ন]
-
রাণীনগরে খাদ্যগুদাম রাস্তা খানা-খন্দে ভরা,ঘটছে দুর্ঘটনা [ প্রকাশকাল : ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৭:৩১ অপরাহ্ন]
-
নওগাঁয় চলছে অবৈধ ভাবে গ্যাস সরবরাহ [ প্রকাশকাল : ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৭:০৯ অপরাহ্ন]