তারিখ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

ভালুকায় সফল কৃষি খামারী মেজর (অবঃ) শফিকুল

ভালুকায় সফল কৃষি খামারী মেজর (অবঃ) শফিকুল
[ভালুকা ডট কম : ২৯ নভেম্বর]
মাঠ ভরা সোনালী ধান কাটতে শ্রমিকদের সাথে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আঙ্গারগাড়া গ্রামের সফল কৃষি খামারী মেজর (অবঃ) শফিকুল ইসলাম। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া প্রায় ৬ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। ২৯ নভেম্বর শুক্রবার আঙ্গারগাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কেপ মাথায় কাটার হারভেষ্টার মেশিন চালিয়ে আমন ধান কাটছেন তিনি। এরপর বাড়ী সংলগ্ন একটি পাকা ধানক্ষেতে শ্রমিকদের সাথে কাস্তে নিয়ে লেগেযান ধান কাটায়। বেলা ১টায় এ প্রতিনিধিকে সাথে নিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করেন।

তিনি জানান চাকরী করা অবস্থাতেও মাঝে মাঝে বাড়ী এসে কৃষি খামারে তদারকি করে সময় কাটেতেন।দেশ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর গুরুত্বপুর্ণ পদে সমাসীন থেকেও গ্রাম মাটিকে আকড়ে ধরে ভালুকার আঙ্গারগাড়া গ্রামে ধান চাষের পাশাপাশি নিজ বাড়ীতে গড়ে তুলেছেন দেশ বিদেশের নানা প্রজাতির ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষের সমাহারে কৃষি বাগান। বাগানের পাশে একটি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন যেখানে প্রায় ২০/২৫ টির মত দেশী ও বিদেশী গরু রয়েছে। দেখাশোনার জন্য একজন কাজের লোক রেখেছেন। নিজস্ব দুটি পুকুরে মাছেন চাষ করেছেন। ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম নান্নু ও মা আলহাজ বেগম সুফিয়া হক মিলে আরও প্রায় ৩০ একর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। শফিকুলের পিতামহ তৎকালীন সময়ের চেয়ারম্যান( ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট) আলহাজ আমছর আলী সরকারকে ওই এলাকার লোকেরা একসময় হালের রাজা বলে ডাকতেন। জমি চাষ করতে ২০/২৫ টি হাল একসাথে মাঠে কাজ করতো। যদিও এখন আর জমি চাষে লাঙ্গল গরুর হালচাষ হয়না।

পাড়া গাঁয়ের নির্মল বাতাস আর সবুজ শ্যামলিমায় কেবলই যাকে হাতছানি দেয় তিনি হলেন আঙ্গার গাড়া গ্রামের মরহুম মুিক্তযোদ্ধা শামছুল হক মেম্বারের বড় ছেলে মেজর (অবঃ) শফিকুল ইসলাম। যিনি এক সময় ছুটি পেলেই চলে আসতেন গ্রামের বাড়ীতে। বাড়ীর সামনের প্রায় দুই একর জমিতে আমরোপালী জাতের আম বাগান সহ প্রায় ৬০ প্রজাতির দেশী বিদেশী গাছ লাগিয়ে কৃষি বাগান করেছেন। ২০১৭ সালে চাকুরী হতে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অবসরে পরাশুনা ও কৃষি কাজে সময় ব্যয় করেন। কৃষি বাগান করার পেছনে তিনি তার ইচ্ছা ও দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। ছাত্র জীবন থেকে কৃষির প্রতি বিশেষ করে বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্যায় তিনি সকলের প্রিয়ভাজন ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষন শেষে ১৯৮৮ সালে কমিশন প্রাপ্ত হন। তার পিতামহ আনছার আলী সরকার ও মাতামহ ইনছান আলী সরকারের বিরল প্রজাতির ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষের বাগান ছিল। তাদের অনুপ্রেরণাতেই তিনি বিরল প্রজাতির দেশী বিদেশী বৃক্ষের চারা সংগ্রহের নেশায় মেতে উঠেন। আর বাড়ীর আঙ্গিনা ও চার পাশে রোপন করেন দেশী বিদেশী নানা জাতের মূল্যবান গাছ পালা। গত কয়েক বছর ধরে প্রায় দুই একর জমিতে বেড়া দিয়ে বিভিন্ন জাতের আম সহ ৬০ প্রজাতির গাছের কৃষি বাগান গড়ে তুলেছেন। কয়েক বছর যাবৎ আমরোপালী গাছে আম আসছে।

তিনি কর্মস্থলে থাকা কালীন সময় বাড়ীতে মা আলহাজ সুফিয়া হক ও ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম নান্নু কৃষি বাগানটির দেখাশোনা করতেন। এক এক করে প্রতিটি গাছের সাথে নাম ও গুনাগুনের পরিচয় করালেন তিনি। আফ্রিকান আতা বা সাওয়ার সফট এটি টক ফল ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহারী যা ১৫ শ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। আলু বোখারা বিরানি রান্নায় ব্যবহার হয়। এবুকাডো পাকলে পেষ্টের মত হয় হোটেল রেস্তোরায় সালাদ হিসেবে মুখ রোচক। এছারা বাগানে রয়েছে রাম বোটান, জয়ফল, তুতফল, শাওল, জাবাতি কাবা, মেংগেষ্টিন, কোশিও নাট, বিলম্বি, আতাফল, বারি মাল্টা, থাই মাল্টা, তৈশর,  ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত মিষ্টি জলপাই, লবঙ্গ, থাই সরিষা, ফলসা, জামাল ফল, জামরুল, বার মশলা, ম্যান্ডারিন বা চায়না কমলা, বারি বের, বহেরা, হরিতকি, আমলকি, ত্রিফলা, দেশী ডালিম, দেশী গাব, কারিপাতা, পলিমার পেয়ারা, কাজি পেয়ারা, দেশী পেয়ারা, মিষ্টি কামরঙ্গা, টক কামরাঙ্গা, নাটোরের মাল্টা,থাই জাম্বুরা, থাই সফেদা, দেশী সফেদা, কাউফল, বেদেনা, ষ্টার আপেল, অরবরই, আশফল বা কাঠলিচু , গোলাপজাম, বারি পেয়ারা, কদবেল, নাগপুরি কমলা, বক্স বাদাম, বার মাসি সজনে, চেরিফল ইত্যাদি। তার হাতে রোয়া বাড়ীর সামনে উঠানে আফ্রিকান জাতের দুটি পাম গাছ পাশা পাশি দাড়িয়ে রয়েছে ।

২০০১ সালে সি এরা লিউনে এক বছর ও ২০১০ সালে আইবরিকোষ্টে এক বছর জাতিসংঘ মিশনে যোগ দেন। ওই সময় তিনি কিছু বিদেশী গাছের চারা  এনেছিলেন যার মধ্যে কিছু আবহাওয়া জনিত কারনে নষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে তিনি বাগানটিকে ভবিশ্যতে আরও উপযোগী করার প্রচেষ্টা করবেন। গাছ নিয়ে তিনি প্রচুর লেখাপড়া করে থাকেন। বহু গাছের বৈজ্ঞানিক নাম সহ গুনাগুন সম্পর্কে তিনি পরিচিত। কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে গ্রামে এসে এই কৃষি বাগানটির পরিচর্যা করছেন সমাজ ও দেশের মানুষকে নতুন কিছু দিতে। গাছ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তাই গাছকে বাঁচিয়ে রাখা ও গাছ রোপন করা প্রত্যেক মানুষের শুধু উচিতই নয় নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যও বটে। তিনি আশা ব্যক্ত করেন গ্রাম  নয় শুধু শহড়েও যাদের সামান্য খালি পতিত জমি রয়েছে তারাও ছোট খাট ফল ফলাদির বাগান করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে অর্থ উর্পাজন করতে পারেন।

ব্যাক্তিগত জীবনে স্ত্রী জেবুন্নেছা বেল গৃহিনী, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সুখী সংসার। ছেলে মোঃ জামিউল ইসলাম (২১) ডেভেলপমেন্ট ষ্ট্যাডিজে দ্বিতীয় বর্ষ ও  মেয়ে শানুম ইসলাম সালভিয়া (৬) তৃতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করছেন।#                                                                 



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

ভালুকা বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই