তারিখ : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

আতাইকুলা বধ্যভূমিতে বাস্তবায়ন হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

আতাইকুলা বধ্যভূমিতে বাস্তবায়ন হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা
[ভালুকা ডট কম : ১২ ডিসেম্বর]
নওগাঁর রাণীনগরের আতাইকুলা গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী একমাত্র ঐতিহাসিক বধ্যভূমিতে স্বাধীনতার ৪৮বছর পার হলেও আজোও সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণসহ আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি। এই বধ্যভ’মি সংরক্ষন ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য গত ২০১৫ দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আজোও বাস্তবায়ন না করায় হতাশ শহীদ পরিবার ও স্থানীয়রা।

পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ৫২জন শহীদদের পরিবার এখনও পায়নি রাষ্ট্রীয় সম্মান। বধ্যভূমিটি শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্দ্যোগে কোন রকমে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাত্র। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাবাসীদেরও দাবী শহীদ পরিবারের এই বধ্যভূমি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের।

ওই দিনের নারকীয় ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া আতাইকুলা গ্রামের প্রদ্যুত চন্দ্র পাল, সাধন চন্দ্র পাল ও নিখিল চন্দ্র পাল ওই দিনের করুন হত্যাযজ্ঞের কাহিনী অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫এপ্রিল রোজ রবিবার সকাল ১০টায় ছোট যমুনা নদী পার হয়ে আসে একদল হানাদার পাক-বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা এই গ্রামে আছে বলে তারা সন্দেহ করে  প্রথমে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে। প্রতিটি বাড়ী থেকে নগদ টাকা স্বর্নালংকাসহ বাড়ীর নারী পুরুষকে ধরে নিয়ে ওই গ্রামের যোগেন্দ্রনাথ চন্দ্রের বাড়ীর উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে পুরুষদের উঠানে সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখে আর উঠানের পাশেই নারীদের এক ঘরে রাখে। একের পর এক নারীদের উপরে চালায় পাশবিক নির্যাতন। পরে সারিবদ্ধ পুরুষদের উপরে চলে ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যেই ওই গ্রামের ৬৮জনের মধ্যে ৫২জন শহীদ হন। পরে তারা বিভিন্ন বাড়ীতে লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। শহীদদের মধ্য থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও কোন রকমে বেঁচে যায় প্রদ্যুত পাল, সাধন পাল ও নিখিল পাল।

প্রদ্যুত পাল আরো জানান, ওই দিন তার বাবা, কাকা জ্যাঠা এবং গ্রামের লোকজনের সাথে তাকেও সারিবদ্ধ করে চালায় ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যে প্রাণ হারায় ৫২ জন লোক। হানাদার বাহিনীরা চলে যাবার পর রক্তাক্ত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশের মধ্য থেকে কোন রকমে বেঁচে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সে তার বাড়ীতে যায়। সবাইকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়েছি। স্বাধীনতার ৪৮বছর পার হলেও কোন সরকারের আমলে কোন শহীদ পরিবার এখনও কোন সাহায্য সহায়তা পায়নি। কোন স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে উঠেনি ও সংরক্ষণ করা হয় নাই এই বধ্যভূমি।

সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক গত ১৯৯৬ সালে নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে কোন রকমে ফলকে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করলেও আর কোন কাজ হয়নি এখানে। বধ্যভূমিটি পরে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।

শহীদ পরিবারের সন্তান গৌতম পাল জানান, সেই দিন ৫২টি লাশ ৩দিন পরে থাকার পর পাশের গ্রামের লোকজনরা এসে কোন রকমে ঘটনাস্থলের পাশেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে। এরপর আমরা এখানে স্মৃতিস্তম্ভ ও সংরক্ষন করার জন্য জমি দান করেছি। এছাড়াও অনেক পথ অতিক্রম করে গত ১৫সালের মার্চ মাসের ১৫তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বধ্যভ’মি সংরক্ষন ও এখানে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলার জন্য তার কার্যালয় থেকে একটি নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেই নির্দেশনা আজোও বাস্তবায়ন করা নাই। এতে করে আমরা শহীদ পরিবারসহ স্থানীয়রা চরম হতাশ। অবিলম্বে সরকারি ভাবে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক এবং এই সব অসহায় সুবিধা বঞ্চিত শহীদ পরিবারগুলোকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা হোক বলে জোর দাবী  এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারদের সকল সদস্যদের।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাড. ইসমাইল হোসেন বলেন এই বধ্যভ’মি সংরক্ষন ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা আজোও বাস্তবায়ন না হওয়া বড়ই পরিতাপের বিষয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও দেশের প্রতি শহীদদের কি অবদান ছিলো তা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ও শত শত বছর টিকে রাখার জন্য অতিদ্রুত এই বধ্যভ’মিতে আধুনিকতার ছোঁয়া ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা অতিবও প্রয়োজন।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো: ইসরাফিল আলম বলেন জেলার মধ্যে এতোবড় বধ্যভ’মি আর কোথাও নেই। কি কারণে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা আজোও বাস্তবায়ন করা হয়নি তা আমার অজানা। তবে বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। বর্তমান সরকারই একমাত্র সরকার যে সরকার দেশ স্বাধীনের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কাজগুলো করেছে এবং করে যাচ্ছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। আমি আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই আতাইকুলা বধ্যভ’মি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করবে এবং এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই