তারিখ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

নওগাঁয় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে গরীবের ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স

নওগাঁয় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে গরীবের ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স
[ভালুকা ডট কম : ৩১ জানুয়ারী]
স্বাস্থ্য সেবা দ্বোরগোড়ায় পৌছে দিতে সরকার দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছেন। স্বাস্থ্যসেবা আরো একধাপ এগিয়ে নিতে নওগাঁয় চালু করা হয়েছিল ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ‘গরীবের ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স’। এই অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা ভোগ করতো প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষরা। গ্রামের কাঁচা-পাকা মেঠো পথে সাইরেন বাঁজিয়ে ছুটে চলা সেই অ্যাম্বুলেন্সগুলো এখন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় দ্বিতীয় লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২) থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে জেলার ১১টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়নে ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স ইজিবাইক (ব্যাটারি চালিত চার্জার) চালু করা হয়। ভ্রাম্যমান এই অ্যাম্বুলেন্সটি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরী করা হয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্সের ছাদে ঘূর্ণায়মান লাল আলোর বিচ্ছুরণের জন্য লাগানো হয়েছিল সাইরেন হর্ণ। আর ভেতরে ছিল দুই সিটের গদি আঁটা আসনে সাহায্যকারী ও প্রসূতি শুয়ে-বসে থাকার সু-ব্যবস্থা করে সৌন্দর্য দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের রুপ দেওয়া হয়। ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে জরুরি প্রয়োজনে ফোন নাম্বার দেয়া হয়। ছাদে ঘূর্ণয়মান লাল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে সাইরেন বাজিয়ে গ্রামের কাঁচা-পাকা মেঠো পথে ছুটে চলত সেই অ্যাম্বুলেন্স। দিন-রাত যে কোন সময় কল করে ঠিকানা জানিয়ে দিলেই বাড়ির দোরগোড়ায় গিয়ে হাজির হতো অ্যাম্বুলেন্সটি।

অ্যাম্বুলেন্সটি দেখভালের জন্য অনেকটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের। বেতনভুক্ত নির্দিষ্ট কোন চালক না থাকায় কখনো গ্রাম পুলিশ আবার কখনো স্থানীয়দের দিয়ে পরিচালনা করা হতো। অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সহজেই রোগী আনানেয়া করা যেত। কিন্তু সেই অ্যাম্বুলেন্সগুলো এখন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ব্যাটারি না থাকায় এ অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন থেকে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থেকে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সচেতনদের দাবী অ্যাম্বুলেন্সগুলো পুনরায় চালু করা হোক।

তিলকপুর ইউনিয়নের অ্যাম্বুলেন্স চালক শাহিন বলেন, আমার আগে ওই অ্যাম্বুলেন্স ২/৩জন চালিয়েছিল। পরে আমি এক বছর চালানোর পর ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। এ সময়ে প্রায় ২০০-২৫০ জন রোগীকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত-দিন যেকোন সময় কেউ ফোন দিলে ছুটে যেতাম। ভাড়া নিয়ে কোন দরদাম করতাম না। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিতো। তবে যে টাকা পাওয়া যেত তা দিয়ে চলা সম্ভব ছিলনা। এছাড়া নিজেও কিছু টাকা খরচ করে মেরামত করেছিলাম। প্রায় ৯মাস থেকে ব্যাটারির অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এলাকাবাসীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সদর উপজেলার তিলকপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ২ লাখ টাকা খরচ করে অ্যাম্বুলেন্সটি তৈরী করা হয়েছিল। প্রথম দিকে ভালোই চলছিল। বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্সটির চাহিদা কমে গেছে। ইঞ্জিন চালিত (ডিজেল বা গ্যাস) হলে ভাল চলতো এবং জনগন উপকৃত হবে। ৪৪ হাজার টাকা দিয়ে একবার ব্যাটারি পরিবর্তন করা হয়েছিল। বছর খানেক পর নষ্ট হয়েগেছে। এখন মরিচা ধরছে। ইউনিয়নে কোন ফান্ড না থাকায় ব্যাটারি পরির্বতন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া দেয়ার কোন সুযোগ নাই। রোগী ছাড়া কেউ উঠতেও চাইনা। যে শ্রম দিবে দিনে যদি কোন রোগী না পাই তাহলে তো তার পেট চলবে না।

বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি দিয়ে তেমন সুফল নিয়ে আসতে পারিনি। রোগীরা চাই দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর এটা ব্যাটারির সাহায্যে চলে ধীর গতিতে। এছাড়া চালক সংকট। ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একবার মেরামত করা হয়েছিল। বছরখানেক চলার পর আবারও নষ্ট। গত ৮ মাস থেকে এখন অবধি পড়ে আছে।

নওগাঁ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মো: শাহনেওয়াজ বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে দুরবর্তী বা প্রত্যান্ত এলাকার মানুষদের হাসপাতালে আনানেয়ার সুবিধার জন্য এমন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছিল। একটি ভাল উদ্যোগ ছিল। যা ছিল ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্পদ এবং দেখভাল তাদেরকেই করতে হবে। তিনি বলেন, সামনে একটা মিটিং আছে। যেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা আসবেন। সেখানে ইউনিয়ন পর্যায়ের অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তারপরও আমরা নতুন করে উদ্যোগ গ্রহন করার চেষ্টা করব।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই