তারিখ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

অর্থনীতিতে করোনার সম্ভাব্য প্রভাব ও উত্তরণের উপায়

অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রভাব ও উত্তরণের উপায়
[ভালুকা ডট কম : ০১ এপ্রিল]
করোনাভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউনে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে; পণ্য সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হবে এবং কমে যাবে রফতানি আয় ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আয়। তাছাড়া রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও রয়েছে শংকা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল বিকেলে নিজ বাসভবনে সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবদের সাথে ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব ও উত্তরণ’ সংক্রান্ত এক পর্যালোচনা বৈঠকে এসব সংকটের কথা ব্যক্ত করেছেন।অর্থনীতির এমন সংকটজনক অবস্থায় এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষ ও অর্থনীতিকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।

সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বমহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও নানামুখী অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবেলা করতে হতে পারে। আমরা এখনো জানি না করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কত দিন প্রলম্বিত হয়। আমাদের আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম হয়েছে এবং করোনাভাইরাসের কারণে অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ আরো কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বিলম্বের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং এভিয়েশন সেক্টরের মতো সার্ভিস সেক্টরগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এবং প্রবাসীদের আয়ের ওপর।

অর্থমন্ত্রীর আশংকাগুলোর সাথে একমত পোষণ করে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেন, করোনার বৈশ্বিক প্রভাবে একটা আর্থিক মন্দা চলে আসছে, বাংলাদেশও তার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সন্দেহ নেই।  তবে বাংলাদেশের নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে তাদের নিজেদের আয়ের ওপর নির্ভর করে চলতে হয় বলে বিপুল সংখ্যক মধ্যম বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে আর্থিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করতে পারে।

এ সময় সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ বিশেষ করে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণ পুঁজি এবং দেশের ব্যাংকিং খাতের স্বেচ্ছা ঋণ-খেলাপিদের কাছ থেকে অনাদায়ী অর্থ আদায় করে আপদকালিন সহায়তা দিয়ে মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার পরামর্শ দেন ড. আনু মুহাম্মদ।

এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে  বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে ৩.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।আশংকা করা হচ্ছে, দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পসহ উৎপাদনমুখী সব প্রতিষ্ঠানে বিরূপ প্রভাব এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে।

করোনা মোকাবেলা ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি ও মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধিকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক এ বিরূপ প্রভাব উত্তরণে বেশ কিছু অবিলম্বে, স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর সাথে গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আইআরডি সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আগামী বাজেট নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়, বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে বাজেটে যাতে আর্থিক সঙ্কট না হয় সে জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত আছে বলে জানানো হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আজ দেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গত বছর ৮.১৫ শতাংশ হারে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছরে আমরা ৮.২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে এগোচ্ছিলাম। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে এটা এখন সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশও এই নেতিবাচক প্রভাব হতে মুক্ত নয়। এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা, পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় আহারের ব্যবস্থা করা।

বৈঠকে  জানানো হয়,  অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূল ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিম্ন-আয়ের মানুষদের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। শিল্প উৎপাদন এবং রফতানি বাণিজ্যের আঘাত মোকাবেলায় কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটির শিল্পগুলোর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় আরো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যবসায়-বান্ধব বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী জুন মাস পর্যন্ত কোনো গ্রাহক যদি কিস্তি পরিশোধে অপারগও হন তথাপিও তাকে ঋণখেলাপি না করার ঘোষণা দিয়েছে।

এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধেও জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে অপারগ হলেও ঋণখেলাপি করা হবে না। রফতানি আয় আদায়ের সময়সীমা দুই মাস থেকে বৃদ্ধি করে ছয় মাস করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা চার মাস থেকে বৃদ্ধি করে ছয় মাস করা হয়েছে। মোবাইলে ব্যাংকিংয়ে আর্থিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই