তারিখ : ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

লকডাউন কার্যকর,লকডাউন শিথিল ও সামাজিক সুরক্ষা

লকডাউন কার্যকর,লকডাউন শিথিল ও সামাজিক সুরক্ষা
[ভালুকা ডট কম : ১৩ মে]
অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ কোভিড-১৯ নামক প্রানঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করছে। গত ২৬ মার্চ থেকে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ পর্যন্ত কয়েক দফায় এ ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো দীর্ঘ সাধারণ ছুটি চলছে। মূলত উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি এ পদক্ষেপ। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এ সাধারণ ছুটি আসলে অঘোষিত লকডাউন। কোন কোন স্থানে অবস্থা সাপেক্ষে কার্যত কঠোর লকডাউন চলছে। মহামারি ঠেকাতে সরকার সবধরণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা প্রশংসার দাবিদার।

সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, কনটাক্ট ট্রেসিং, কঠোর লকডাউন অব্যাহত রাখার মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ সংক্রমনের মাত্রা কমাতে সক্ষম হয়েছে। লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজের কোভিড-১৯ রেসপন্স দলের গবেষণায় জানা যায় ইউরোপের ১১ টি দেশ কঠোরভাবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার নীতি অনুসরণ করায় সংক্রমিত ব্যক্তি অন্যের সংস্পর্শে যেতে পারেনি। ফলে সংক্রমনের অনুপাত হ্রাস পেয়েছে। জনবহুল বাংলাদেশে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে শুরু থেকে গৃহীত উদ্যোগ সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই দেশের পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার চিন্তা জনমনে প্রভাব ফেলছে। আসন্ন উৎসবকে উপলক্ষ করে শপিংমল গুলো খুলে দেয়ার চিন্তায় ঘরবন্দী মানুষের মনের লকডাউন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

আশঙ্কা বা উৎকন্ঠা যাই বলি না কেন, তীরে এসে তরী ডুবানোর মতো পরিস্থিতি আমাদের দেশে হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। কিছু সংখ্যক জনগণের দ্বারা সামাজিক দুরত্বে ছেদ, লকডাউন ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা, সরকারি নির্দেশনা হালকা ভাবে নেয়ার মতো ঘটনায় জাতিকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে। লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে আমাদের অবশ্যই অভিজ্ঞতা আছে এমন দেশকে লক্ষ্য করতে হবে। যেমন জাপানের সর্ব দক্ষিণের দ্বীপ হোক্কাইডো, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অনেকটা সফল হওয়ার পথে ছিলো। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংক্রমনের সংখ্যা কমিয়ে এক বা দুইয়ে সীমাবদ্ধ করেছিল। কিন্তু ১৯ মার্চ জরুরী অবস্থা তুলে নেওয়ায় ২৬ দিনের মাথায় পুনরায় জরুরী অবস্থা আরোপ করতে হয়েছিল।

এপ্রিলের শেষের সময় থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন যায়গায় লোকজনের চলাচল আগের তুলনায় বেড়েছে। ঢাকায় নতুন করে লোকের সমাগম হচ্ছে। পোশাক কারখানার কাজে যোগ দিতে লোকজন বিভিন্ন উপায়ে রাজধানী ও শিল্প এলাকায় প্রবেশ করেছে। এ ক্ষেত্রে লোকজন সরকারি নির্দেশনা না মেনেই সামাজিক দুরত্বে ছেদ ঘটিয়েছে। ফলে আশঙ্কা বেড়েই যাচ্ছে, যেমন গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ১৯ জন। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৬৯ জনে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ১১৬২ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৭ হাজার ৮২২ জন। গত ছয়দিনের ফলাফল লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে গত ৮ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ছয়দিনে মোট আক্রান্ত ৫৩৯৭ জন। ছয়দিনের গড় ফলাফল ৮৯৯.৫ অর্থাৎ এ মুহুর্তে প্রতিদিন গড়ে ৮৯৯.৫  জন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে, যা পূর্বের তুলনায় অনেক। আজকে পর্যন্ত সর্বমোট  আক্রান্ত রোগী হলো ১৭৮২২জন।  
 গবেষকগণ নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটিকে খুব ঝুকিপূর্ণ দাবি করেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান খ্যাত জার্নাল দ্য ল্যানসেটে  প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র প্রতিষেধক আবিস্কার না হওয়া পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছে।

এখন যেখানে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে সেক্ষেত্রে লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর বা শিথিলের বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের দাবিদার। জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) এর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের বক্তব্যে উল্লেখ আছে দেশের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউন শিথিল করা যেতে পারে কেবল নিরাপত্তার বিষয় গুলো নিশ্চিত করে। তা না করা হলে পরিস্থিতির স্থায়িত্বতা নিয়ে সন্দেহ থাকে। তিনি বলেছেন ধাপে ধাপে শিল্প ও বানিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত পরিসরে খুলা যায়। করোনা আক্রান্ত এলাকাগুলোকে জোনে বিভক্ত করে সুরক্ষিত উপায়ে চালু করা যেতে পারে ব্যত্যয় ঘটলে বিপর্যয় হতে পারে।

কোনো দেশের লকডাউন তুলে নেয়ার পূর্বে কিছু বিষয় নিশ্চিত করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ একি ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, ‘কোন  দেশ লকডাউন শিথিল বা তুলে নেয়ার আগে তাদের জনস্বাস্থ্য বাহিনীকে প্রসারিত করুন, প্রশিক্ষণ দিন এবং মোতায়েন করুন’। বিশেষজ্ঞগণ আরো বলেছেন যে, ‘লকডাউন তুলতে হবে কৌশল নিয়ে ধীরে ধীরে। দোকানপাট প্রথম দিকে খুলার পর পরিস্থিতি বুঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে। এভাবে পর্যায়ক্রমে উপাসনালয়, পর্যটন কেন্দ্র ও অন্যান  প্রতিষ্ঠান।তবে নিবিড় পর্যবেক্ষন ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু একসাথে সব খুলে দিলে তা ভীষণ বোকামি হবে’।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি সিদ্ধান্ত জনগণের কল্যাণের জন্য হয়ে থাকে। জনগণের দ্বারা গঠিত জনগণের সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ জনকল্যাণ বয়ে আনে। এ লক্ষ্যে সাধারণ ছুটি বা লকডাউন কার্যকর বা শিথিল যাই হোক, সরকারি আদেশ মেনে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার এবং ব্যক্তিক পর্যায়ে অবদান রাখতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্যানুসারে বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ হতে শুরু করে ধাপে ধাপে জেলা পরিষদ ও সংরক্ষিত নারী সদস্য সহ মোট নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন প্রায়  ৬৭৯৪৮ জন। টপ থেকে বটম পর্যন্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম আরো বেশি অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। স্থানীয় পর্যায়ে সেচ্ছাসেবী দল গঠনের মাধ্যমে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করা, আক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্ত করা এবং আইসোলেশন সফল করার কাজটি জোরদার করতে হবে। গরীব দুঃখীদের তালিকা তৈরি করে সামাজিক নিরাপত্তার সঠিক বাস্তবায়ন সহ প্রত্যেকটি ব্যাপারে নিবিড় পর্যবেক্ষণ সম্ভব করতে হবে। নগর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামে সংক্রমণ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিগণের দায়িত্বশীল ভূমিকা আরো জোরদার করার এখনি সময়। পাশাপাশি ব্যক্তি হিসাবে সামাজিক দায়বদ্ধতার আবশ্যকতা থেকে যায়। সেজন্য সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে এসে নিজের কর্তব্যটুকু পালন করতে হবে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতায় জোর দেয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সরকারি আদেশ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ পালন করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরী। নিরাপদ বাড়ি বা নির্দিষ্ট এলাকার ঘেরাটোপেই থাকতে হবে।

বার্তা প্রেরক
জাহাঙ্গীর আলম তরফদার
প্রভাষক, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ
সরকারি এম এম আলী কলেজ
কাগমারী, টাঙ্গাইল।



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

অন্যান্য বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৬ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই