তারিখ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার

সংবাদ শিরোনাম

বিস্তারিত বিষয়

অপরাজিতা ফেন্সি বানুর এগিয়ে চলার গল্প

একজন অপরাজিতা ফেন্সি বানুর এগিয়ে চলার গল্প
[ভালুকা ডট কম : ১২ ফেব্রুয়ারী]
“মাতা ভগিনী, কণ্যে! আর ঘুমিও না, ওঠো” প্রায় শত বছর আগের বেগম রোকেয়ার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে নওগাঁর বদলগাছী অঞ্চলের নারীরা ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। এই জাগরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে “ফেন্সি বানু” নামের একজন অপরাজিতা নারী। যিনি শত প্রতিকুলতার মধ্যেও কখনও থেমে থাকেননি। কূপমন্ডূকতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে সমাজকে এগিয়ে নেয়ার কাজে নানা ভাবে অবদান রেখে চলেছেন এই আত্মপ্রত্যয়ী নারী।

জেলার বদলগাছী উপজেলার কদমগাছী গ্রামের আলতাফ মন্ডল ও মাতা রহিমা বেগমের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন ফেন্সি বানু। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন একজন সফল নারী হিসেবে। হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্য নারীদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য। স্বীয় প্রচেষ্টা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে বর্তমানে তিনি জেলায় একটি পরিচিত মুখ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

ফেন্সি বানু বলেন শিক্ষা জীবনে শুরুতে তার রাজনীতি  পদচারনা। ১৯৯৭সালে মথুরাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির হাতে খড়ি শুরু হয়, ক্রমান্বয়ে ১৯৯৮সালে বদলগাছী মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহবায়ক ও ২০০৩সালে বদলগাছী উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক, ২০০৫সালে বদলগাছী উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক, ২০০৬সালে বদলগাছী উপজেলা যুব মহিলা লীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, ২০১২সালে বদলগাছী উপজেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে নওগাঁ জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম-আহবায়ক ২০১৫সালে নওগাঁ জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে  অদ্যবধি পর্যন্ত নওগাঁ জেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দক্ষতার জন্য তিনি এখন জেলায় একজন নির্ভরযোগ্য মহিলা নেত্রী হয়ে উঠেছেন। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সর্বোপরি রাজনৈতিক অধিকারহীনতার কারণে নারীর অবস্থান এখনো নাজুক। ফলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠছে ও বেঁচে থাকছে। নারীর এই অবস্থা ও অবস্থান থেকে পরিবর্তন করতে তিনি নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে কাজ করে আসছেন।

তিনি ২০১৯সালে অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন। অপরাজিতা প্রকল্পের সংস্পর্শে এসে প্রশিক্ষণে পাওয়া জ্ঞান-দক্ষতাকে পুঁজি করে পিছিয়ে পড়া নারীদের ভাগ্যোন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি জেলার যুব মহিলালীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে  প্রতিটি  উপজেলা ও ইউনিয়নে যুব মহিলালীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে গিয়ে ৩হাজারের অধিক নারীকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেছেন এবং ২০০নারীকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহায়তায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মুল কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করেছেন।

অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে যুক্ত হওয়ার পরে রাজনৈতিক ক্ষেত্র ছাড়াও সামাজিক কর্মকান্ডে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য সর্বদা কাজ করে চলেছেন তিনি। বিশেষ করে অসহায়, দুস্থ ও পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বদলগাছী উপজেলার ভাতসাইল গ্রামে একটি বেসরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেল্থকেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদে কর্মরত আছেন। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ১০০-১৫০জন মানুষ সেবা নিয়ে থাকেন। গর্ভবতী দরিদ্র নারী, শিশুসহ সকল ধরনের মানুষ সেখানে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও কদমগাছী নারী জাগরন মহিলা সমিতির সভাপতি, বহুমুখি নারী উন্নয়ন যুব মহিলা সমিতির সভাপতি এবং মথুরাপুর বিটিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে যুক্ত হওয়ার পরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, তার জ্ঞান-দক্ষতার প্রসার ঘটে আগের তুলনায় অনেক বেশী। জনগনের মাঝে সম্পৃক্ততা বাড়াতে বাল্য বিবাহ বন্ধ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক সমাজ সেবামূলক কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। তার যোগ্যতা ও দক্ষতার জন্য তিনি ইউনিয়ন উপজেলা নেটওয়ার্কের সভাপতি ও জেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সাংগাঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজনৈতিক জীবনে অনেক পদচারনা থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তার পদচারনা একাবারে ছিল না বললেই চলে, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীন গ্রুপিং, প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের চাপ, পদ-পদবী হারানোর ভয় প্রভৃতি কারনে তিনি কখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু অপরাজিতা প্রকল্পের সংস্পর্শে এসে  প্রশিক্ষণে পাওয়া জ্ঞান-দক্ষতাকে পুঁজি করে তার আত্মবিশ^াসের জায়গা আরো দৃঢ় হওয়ায় তিনি প্রথমে ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য প্রচার-প্রচারনা করেন।

কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপে সেখানেও থেমে গেলেও আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য প্রচার-প্রচারনা ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ে উঠান বৈঠক করছেন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে এ্যাডভোকেসী করে চলেছেন। তিনি একটি সমতার সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেন। তিনি নারী বান্ধব উপজেলা পরিষদ গঠন করতে চান যেখানে নারীরা সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা পাবেন। সরবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এভাবেই ফেন্সি বানু সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে শেষ জীবন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চান বলে ইচ্ছা পোষণ করেছেন।#



সতর্কীকরণ

সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।

কমেন্ট

নারী ও শিশু বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

অনলাইন জরিপ

  • ভালুকা ডট কম এর নতুন কাজ আপনার কাছে ভাল লাগছে ?
    ভোট দিয়েছেন ৮৯০৭ জন
    হ্যাঁ
    না
    মন্তব্য নেই